ADAB – Association of Development Agencies in Bangladesh

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রয়োজন সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের কার্যক্রমের সুষ্ঠ সমন্বয়।

- কাউসার আলম কনক।
ADAB_SDG_Goals
স্বাধীনতা লাভের পরপরই যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পূর্নগঠন করতে সরকারের সহযোগী হিসাবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ কাজ শুরু করে। সরকার কর্তৃক গৃহিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ শুরু থেকেই সহায়তা করে আসছে। সময়ের সাথে সাথে উন্নয়ন কার্যক্রমের ধরণ ও কৌশল উভয়েরই পরিবর্তন হয়েছে।

প্রথম দিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমুহের কার্যক্রম কেবলমাত্র ত্রাণ ও পূণর্বাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এসব সংস্থাসমূহ বহুমাতৃক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিস্কাশন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা, সুপেয় পানি সরবরাহ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, পুঁজির আদান প্রদানে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসূহ ক্রমাগতভাবে সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে।
সাফল্যের সাথে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি বাস্তবায়নেও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমুহের অবদান রয়েছে। বর্তমান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের জন্যও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ ব্যাপকভাবে কাজ করছে। এসব সংস্থাসমূহের গৃহিত প্রকল্প এসডিজির কোন না কোন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে। কাজেই বর্তমানে সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমের সুষ্ঠ‚ সমন্বয় আবশ্যক।

যেহেতু সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, সেহেতু উভয়ের কার্যক্রমের সুষ্ঠ‚ সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্বৈততা পরিহার করা সম্ভব হবে। সমন্বয় কার্যক্রম জোড়দার করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের প্রতিমাসে সমন্বয় সভা হয়। এসব সমন্বয় সভা কেবলমাত্র নিয়ম রক্ষার্থে না করে গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য, সময় নিয়ে বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমের দুর্বল ও সবল দিক বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা ও সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একটি বিষয় সবারই মনে রাখা প্রয়োজন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য কাজ করছে। কাজেই তাদের কাজকে নিয়ন্ত্রণ না করে সহায়তা করলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত তরান্বিত হবে।
উন্নয়ন কার্যক্রমের সার্বিক সমন্বয়ের জন্য সরকার দেশে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থামূহের সমন্বয়কারী ও প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন এডাবকে (এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ) সম্পৃক্ত করতে পারে। সমন্বয়কারী সংগঠন হিসাবে এডাব দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ সংগঠন। এডাব জাতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও স্থানীয় পর্যায়ে জেলা শাখা কার্যকরী কমিটির মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় করে থাকে।

সাংগঠনিক ভাবে বর্তমানে সারাদেশে ৬১ জেলায় এডাব-এর শাখা রয়েছে। জেলায় কর্মরত সদস্যসংস্থার মধ্য থেকে তাদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ৫ অথবা ৭ সদস্য বিশিষ্ট জেলা শাখা কার্যকরী কমিটি নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত জেলা শাখা কার্যকরী কমিটি স্থানীয় প্রশাসন, সুশীল সমাজ ও নাগরিক সমাজের অপরাপর অংশের সাথে কার্যকর যোগাযোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় করে থাকে। স্থানীয় পর্যায়ে সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য স্থানীয় জেলা শাখাকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
অন্যদিকে বর্তমান সরকার ১৯৯৬-২০০১ সাল মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের কার্যক্রম সুষ্ঠ‚ সমন্বয় সহযোগিতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের নেতৃত্বে “জিও-এনজিও কনসালটেটিভ কাউন্সিল বা জিএনসিসি” নামে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি প্রতি দুইমাস পরপর সভায় মিলিত হয়ে সার্বিক এনজিও কার্যক্রমের সমস্যা সম্ভাবনা ও সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা করে সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় করার চেষ্টা করত। অনেক সমস্যার তৎক্ষনিক সমাধানও এই সভার মাধ্যমে পাওয়া যেত।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে ক্ষমতার পালা বদলের কারণে কারণে “জিও-এনজিও কনসালটেটিভ কাউন্সিল” বাতিল করা হয়। ২০০৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সেই কমিটি আর পূর্নগঠন করা সম্ভব হয়নি। তবে, সার্বিক উন্নয়ন, সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমের সুষ্ঠ‚ সমন্বয়ের জন্য “জিও-এনজিও কনসালটেটিভ কাউন্সিল (জিএনসিসি)” পুর্নগঠন করা জরুরী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top