ADAB – Association of Development Agencies in Bangladesh

ডেঙ্গুু প্রতিরোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা ও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা।

- কাউসার আলম কনক।
ডেঙ্গু--ADAB-Dengue-Awareness
বিগত কয়েক বছর ধরে জুন-সেপ্টেম্বর এই সময়ের মধ্যে দেশে ডেঙ্গুুর প্রার্দুভাব দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বর হয় সাধারণত এডিস নামক এক প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে। এই মশা পরিত্যাক্ত পাত্রে জমে থাকা পরিস্কার পানিতে ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে লার্ভা তৈরী হয়, এই লার্ভা থেকে উৎপাদন হয় এডিশ মশা। এডিশ মশার বৈশিষ্ট হলো এরা দিনের বেলায় কামড়ায়। এডিস মশার কামড়ের ৩-৬ দিনের মধ্যে শরীরে জ্বর আসে। একটি মশা যে কয়জনকে কামড়াবে সে কয়জনেরই জ্বর হওয়ার আশংকা থাকে।
চলতি বছর ডেঙ্গুুর প্রার্দুভাব অন্য যে কোন বছরের তুলনায় বেশী। আগষ্ট ২১, ২০২৩ তারিখে জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, এবছর ৪৮৫ জন মানুষ ডেঙ্গুু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশী। তাছাড়া এই প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর সবচেয়ে বেশী মানুষ ডেঙ্গুু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এবারকার ডেঙ্গুুর প্রাদুর্ভাবের আরো একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট হলো অতীতে কেবল রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বড় কিংবা জনবহুল শহরগুলোতে ডেঙ্গুুর প্রাদুর্ভাব দেখা যেত। কিন্ত এবার কেবল বড় কিংবা জনবহুল শহরগুলোতে নয়, উপজেলা শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলেও মানুষ আশংকাজনকভাবে ডেঙ্গুু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
ডেঙ্গু--ADAB-Dengue-Awareness-২
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ সামনের আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুু জ্বরের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছে। সুতরাং জনসচেতনতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল হওয়া ছাড়া ডেঙ্গুু জ্বরের এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষার কোন উপায় দেখা যাচ্ছে না। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুক্ষীণ হতে হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। একটি বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারিসহ বিভিন্নভাবে এডিস মশার বংশ বিস্তাররোধে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পাড়া মহল্লায় মাইকিং করা, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত নিজ বাড়ীর আশপাশসহ এডিস মশার লার্ভা উৎপাদন হয়, এমন স্থানসমূহ নিয়মিত পরিস্কার করার জন্য প্রচারণার পরও দেখা যাচ্ছে, পরিত্যাক্ত পাত্র , পুরাতন টায়ার, ডাবের খোসা কিংবা এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে পারে এমনসব পাত্র যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। যা এডিস মশার বংশ বিস্তারে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় পৌরসভা থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়, ক্ষেত্রমত জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু এতে করেও অনেকের মধ্যেই সচেতনতাবোধ বা কিংবা দায়িত্বশীল আচরণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ভবনেও এডিস মশার লার্ভা উৎপাদনের উৎসস্থল রয়েছে।
ADAB-Dengue-Awareness
তাই, কেবল সচেতনতাবোধই নয়, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে হলে জনসচেতনতার পাশাপাশি নাগরিকদের যেমন দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে, বর্তমান ভয়াবহ ডেঙ্গুু পরিস্থিতি সম্পর্কে টতত্ত্ববিদগণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেন। তাদের মতে, পূর্ব থেকে সর্তকতামূলক বার্তা দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন থেকেছেন। ডেঙ্গুু মোকাবেলায় কোন প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। ফলে, ডেঙ্গুু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ADAB-Dengue-Awareness-3
প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় এই সমস্যায় অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ না করে, কিংবা একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ না করে, সবাই মিলে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে ডেঙ্গুু রোগীর সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সামনের দিন গুলোতে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কেবল সরকার কিংবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ উদ্যোগে নিজের বাড়ীর আশপাশ পরিস্কার রাখতে হবে। জমে থাকা পানি প্রতি তিন দিনে একবার পরিস্কার করতে হবে, সবসময় পানি জমে থাকে এমন স্থানে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার বা কেরোসিন ছিটিয়ে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে হবে।
এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এবিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। তারা প্রতিমাসে সভায় মিলিত হয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করবেন। প্রাপ্ত তথ্য- উপাত্তের ভিত্তিতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে তাৎক্ষনিক করণীয় নির্ধারণ করবেন, এবং মধ্যবর্তী ও দীর্ঘমেয়াদী করণীয় নির্ধারণ করবেন। এর বাইরে জরুরী পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে এই টাস্কফোর্সের কাজ। করণীয় নির্ধারণের পাশাপাশি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও মনিটরিং করাও এই টাস্কফোর্সের কাজের আওতাভূক্ত থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top